
নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | প্রিন্ট | 784 বার পঠিত
অংশীজনদের প্রস্তাবের আলোকে সংশোধনী আসছে ২০২১ সালে প্রণীত বীমা এজেন্ট নিয়োগ, নিবন্ধন ও লাইসেন্স প্রবিধানমালায়। ইতিমধ্যে সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। খসড়া প্রস্তাব পর্যালোচনা করতে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি সভা ডেকেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অতিরিক্ত সচিব মোঃ সাঈদ কুতুবের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় আইডিআরএ চেয়ারম্যান, জীবন বীমা কর্পোরেশন ও সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদ্বয়, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের সভাপতিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বীমা এজেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজতর করা এবং লাইসেন্স ও নবায়ন ফি কমানোর জন্য দীর্ঘ দিন ধরে এই প্রবিধান সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছে বিআইএ।
সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী, বীমা এজেন্ট নিয়োগ, নিবন্ধন ও লাইসেন্স প্রবিধানমালা-২০২১ এর প্রবিধি ৬ (ঘ) (অ) ও (আ) তে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। যেখানে বীমা এজেন্ট হিসাবে লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ক্ষেত্রে এক বছরে ১১ টি নতুন পলিসি সংগ্রহ; এবং এর বিপরীতে ২০ হাজার টাকার কমিশন আয় করার শর্ত বিদ্যমান রয়েছে। সংশোধিত প্রস্তাবে তা কমিয়ে নতুন পলিসি ৬ টি এবং প্রিমিয়াম ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
এছাড়া প্রবিধি ৯(১) (গ) তে বীমা এজেন্ট হিসাবে লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে আবেদনের সঙ্গে প্রত্যেক ক্ষেত্রে প্রথম ৩ (তিন) মাস পর্যন্ত বিলম্বের জন্য ১০০ (একশত) টাকা এবং পরবর্তী প্রতি মাসের জন্য ৬০০ (ছয়শত) টাকা; ফি প্রদানের শর্ত রয়েছে। যা সংশোধন করে শুধু মাত্র প্রতি তিন মাস বিলম্বের জন্য ১০০ টাকা ফি নির্ধারণের কথা বলা হচ্ছে।
এর আগে ২০২১ সালের ১৪ নভেম্বর বীমা এজেন্ট নিয়োগ, নিবন্ধন ও লাইসেন্স প্রবিধানমালা-২০২১ এর গেজেট প্রকাশ করে সরকার। তবে গত বছরের ২৫ আগস্ট বীমা এজেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য প্রবিধানমালা সংশোধনের দাবি জানিয়ে আইডিআরএকে চিঠি দেয় বিআইএ।
সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন আহমেদ পাভেলের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বিআইএ থেকে বলা হয়, বীমা আইন, ২০১০ এর ১২৪(১) ধারা অনুযায়ী একজন বীমাকারী বা ব্রোকার একজন ব্যক্তি বীমা এজেন্ট নিয়োগ ও তার নিবন্ধীকরণ করবে এবং প্রত্যেক বীমাকারী বা ব্রোকার কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে বীমা এজেন্ট হিসেবে অনুরূপ সকল নিয়োগ ও নিবন্ধনের একটি রেজিষ্টার সংরক্ষণ করবে। সুতরাং আইনে বীমা কোম্পানির এজেন্ট নিয়োগের ক্ষমতা বীমা কোম্পানিকে দেয়া হয়েছে।
পরবর্তীতে বীমা এজেন্ট (নিয়োগ, নিবন্ধন ও লাইসেন্স) প্রবিধানমালা-২০২১ এর ৩ (১) ধারা অনুযায়ী বীমা এজেন্ট নিয়োগ ও নিবন্ধনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে এবং ৫ ধারা অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত বীমা এজেন্ট এর লাইসেন্স প্রদানের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং এজেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে বীমা আইন, ২০১০ এর ১২৪ (১) ও প্রবিধানমালা-২০২১ এর ৩ (১) সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিআইএ’র চিঠিতে।
এতে আরো বলা হয়, বীমা এজেন্ট (নিয়োগ, নিবন্ধন ও লাইসেন্স) প্রবিধানমালা-২০২১ অনুযায়ী বীমা এজেন্ট নিয়োগ, নিবন্ধন ও লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল। তদুপরি লাইসেন্স ও নবায়ন ফি বেশি হওয়ায় অনেক এজেন্ট বীমা কোম্পানি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে।
নতুন এজেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ ও জটিল প্রকৃতির হওয়ায় তাদের পলিসিগুলো তামাদি হয়ে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন সভায় কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন । এতে করে বীমাশিল্প সার্বিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। গত ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত নির্বাহী কমিটির ২১৬তম সভায় সকলে উপরোক্ত বিষয়ে একমত পোষণ করেন।
এই প্রেক্ষিতে বীমা এজেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজতর করা এবং লাইসেন্স ও নবায়ন ফি কমানোর জন্য বীমা এজেন্ট (নিয়োগ, নিবন্ধন ও লাইসেন্স) প্রবিধানমালা-২০২১ সংশোধন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে বিআইএ’র চিঠিতে।
বীমা এজেন্ট (নিয়োগ, নিবন্ধন ও লাইসেন্স) নিয়ে বিদ্যমান প্রবিধানমালায় স্থায়ী ও অস্থায়ী ভিত্তিতে বীমা এজেন্ট নিয়োগের বিধান করা হয়। এজেন্ট লাইসেন্সের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ বছর। আর মেয়াদের শেষ তিরিশ দিনের মধ্যে বিধি অনুসারে লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে। তবে ছাড়পত্র ছাড়া নিয়োগ পাবেন না অপর কোন কোম্পানিতে।
অস্থায়ী নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়স নূন্যতম ১৮ বছর হতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে, কোনো স্বীকৃত বোর্ডের অধীন মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। তবে আবেদনকারীকে প্রবিধান ১১ এর অধীন অযোগ্য হওয়া যাবে না।
এ ছাড়াও অব্যাহতি প্রাপ্ত এজেন্টের ক্ষেত্রে বীমাকারী বা ব্রোকারের নিকট থেকে প্রাপ্ত ছাড়পত্র এবং লেনদেন নিষ্পত্তির প্রত্যয়নপত্রের সত্যায়িত কপি সংযুক্ত করতে হবে। একইসঙ্গে কর্তৃপক্ষ থেকে ইস্যুকৃত লাইসেন্সের কপিও দাখিল করতে হবে।
স্থায়ী এজেন্ট হিসেবে লাইসেন্স পেতে আবেদনকারীকে অস্থায়ী নিয়োগের ১ বছর সময় শেষ হওয়ার ৩০ দিন পূর্বে বীমাকারীর মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ বাধ্যতামূলক ৭২ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ গ্রহণের সনদ সঙ্গে দিতে হবে। প্রবিধান ১১ এর অধীন অযোগ্য হওয়া যাবে না।
এ ছাড়াও লাইফ বীমার ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে ১ বছরে কমপক্ষে ১১টি নতুন পলিসি সংগ্রহের শর্ত দেয়া হয়। নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহের বিপরীতে ২০ হাজার টাকা কমিশন আয় করতে হবে। এক্ষেত্রে বীমাকারীকে কমিশনের ওপর উৎস স্থলে কর কর্তনের সনদ দাখিল করতে হবে।
নন-লাইফের এজেন্ট হিসেবে লাইসেন্স পেতে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের সনদ দাখিলের পাশাপাশি অস্থায়ী এজেন্ট হিসেবে কর্মকালীন এক লাখ টাকার প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছেন মর্মে সংশ্লিষ্ট বীমাকারী কর্তৃক প্রদত্ত প্রতয়নপত্র জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে বীমাকারী বা ব্রোকার কর্তৃক উক্ত সংগৃহীত প্রিমিয়ামের ওপর প্রদত্ত কমিশনের ওপর উৎস স্থলে কর কর্তনের সনদপত্র দাখিল করতে হবে।
মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩০ দিন আগেই লাইসেন্স নবায়নের আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ৩৬ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ গ্রহণের সনদ থাকতে হবে। লাইফ বীমার এজেন্ট লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে ১ম বর্ষ প্রিমিয়ামের বিপরীতে দ্বিতীয় বর্ষের নবায়ন প্রিমিয়াম সংরক্ষণের হার নূন্যতম ৫০ শতাংশ থাকতে হবে। তবে প্রবিধান ১১ এর অধীন অযোগ্য হওয়া চলবে না।
প্রবিধি ৯ এ বীমা এজেন্ট হিসেবে লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নে পরিশোধযোগ্য ফি উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বীমা এজেন্টের লাইসেন্সের জন্য ১ হাজার ৫শ’ টাকা, লাইসেন্স নবায়নে ১ হাজার টাকা, প্রত্যেক ৩ মাসের মধ্যে বিলম্বের জন্য ১শ’ টাকা ও তদুর্ধ্ব মাসের জন্য ৬শ’ টাকা এবং প্রতিলিপি লাইসেন্সের জন্য ১শ’ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়। এসব ফি কর্তৃপক্ষ ফান্ড এর অনুকূলে ব্যাংক ড্রাফট বা পে অর্ডার বা অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে জমা দিতে হবে।
তবে অপ্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রকৃতিস্থ, আদালতে দোষী সাব্যস্ত, বীমা পলিসি সংক্রান্ত কোন বিচারিক প্রক্রিয়ায় বা বীমা কোম্পানির অবসায়নে বা কোন কার্যের তদন্তকালে দোষী হলে, বীমাকারী বা বীমা গ্রহীতার স্বার্থের পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের জন্য দোষী সাব্যস্ত এবং এই প্রবিধানে বর্ণিত আচরণবিধির লঙ্ঘনকারী বীমা এজেন্ট হতে পারবেন না।
এছাড়াও কোন লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, কর্মকর্তা বা কর্মচারী; অন্যকোন বীমাকারী বা ব্রোকারের অধীনে কাজে নিয়োজিত থাকা অবস্থায়, বহিস্কৃত বা বাতিকলকৃত বীমা এজেন্টের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত এবং একই বীমা শ্রেণীর এজেন্ট না হলে তিনি বীমা এজেন্ট হতে পারবেন না বা তার লাইসেন্স নবায়ন করা যাবে না।
Posted ২:৪৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
bankbimaarthonity.com | rina sristy